সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
দীর্ঘকাল ধরে দক্ষিণ এশীয়ার মহাসাগরে ঐতিহ্যগত প্রভাবের প্রতিফলন হিসাবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টগণ ভারতকে তাদের সফরের প্রথম নোঙর হিসাবে নির্বাচিত করে এসেছেন। কিন্তু মোহাম্মদ মুইজ্জু, যিনি একটি কট্টর ভারত-বিরোধী প্রচারণার পর মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি তার প্রথম সরকারী সফরের গন্তব্য হিসেবে তুরস্ককে বেছে নিয়েছেন। মোহাম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপের পরররাষ্ট্র নীতিকে পুনর্র্নিমাণ এবং বৈচিত্র্যময় করার অভিপ্রায় প্রদর্শন করেছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু মালদ্বীপ থেকে ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার করার দাবিতে দ্বিগুণ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার প্রগ্রেসিভ পার্টি অফ মালদ্বীপ (পিপিএম) দাবি করেছিল যে মালে’র নিকটবর্তী উথুরুথিলাফাল্হু দ্বীপে ভারত যে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে, তা মালদ্বীপে আগ্রাসন চালানের জন্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে ভারত। পিপিএম ‘ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত হঠ’ প্রচারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা নয়াদিল্লিকে মালদ্বীপের স্বায়ত্বশাসন ক্ষুণœ করতে আগ্রহী একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে।
মুইজ্জুর পূর্বসূরি ইব্রাহিম সোলিহ্কে বিশেষভাবে ভারতের ঘনিষ্ঠ দেখা গেছে। বিপরীতে, মুইজ্জুকে অনেকে চীনের ঘনিষ্ঠ মনে করেন। নয়াদিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মুজিব আলম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ভারত মহাসাগর অঞ্চল ও দক্ষিণ এশিয়াতে একটি অপরিহার্য মিত্র এবং কৌশলগত অংশীদার হিসাবে ভারতকে বিবেচনা করার দীর্ঘকালের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে এটি মালদ্বীপের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পুনর্র্নিমাণের সঙ্কেত।’
নভেম্বরে মুইজ্জু আঙ্কারা সফরের সময় দুই দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। তুরস্কে বিশ্বের অন্যতম উন্নত প্রতিরক্ষা শিল্প রয়েছে। তুরস্ক এবং মালদ্বীপ ক্রমবর্ধমানভাবে মূল ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলিতেও একত্রিত হচ্ছে। তারা উভয়েই গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের কঠোর সমালোচনা করেছে, যখন ভারত আরও দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে, যদিও ভারত সম্প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বানে যোগ দিয়েছে।
তুরস্ক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত-শাসিত কাশ্মীরের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা বাতিল করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে এবং কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরেছে। এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক আলম বলেন, ‘এটি নয়াদিল্লির কাছে একটি সূক্ষ¥ বার্তা। ভারত-তুরস্কের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এটি একটি সুচিন্তিত অবস্থান বলে মনে হচ্ছে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তায়েব এরদোগানের অধীনে দেশটি তার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে। অন্যান্য বিষয়গুলির পাশাপাশি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এবং দক্ষিণ এশিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা সফর করেন। জুন মাসে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তুরস্ক সফর করেছেন। তুর্কি এয়ারলাইন্স এক দশক পর গত মাসে শ্রীলঙ্কায় সরাসরি যাত্রীবহন পুনরায় চালু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের তুরস্কের সাথে ঘনিষ্ঠতা অন্যান্য বিষয়ের থেকে বরং মালেকে নয়াদিল্লি থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যেই বেশি। নির্বাচনের পর শপথ নেওয়ার আগে মুইজু সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফরে আসেন, কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য। এদিকে, মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ লতিফ সম্প্রতি চীন সফর করেছেন।
ভারতের বহিরাগত বাণিজ্যের ৫০ শতাংশ এবং তার জ¦ালানী আমদানির ৮০ শতাংশ ভারত মহাসাগর দিয়ে বাহিত হওয়ার ফলে মালদ্বীপের সাথে এই বিভেদ ভারতের উদ্বেগে বাড়িয়েছে। তবে, মুইজ্জুর জন্য সমীকরণটি স্পষ্ট। তিনি যদি ভারতকে বিদায় করতে চান, তাহলে সেখানে অন্যদের আসতে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, এটাই তার সফরগুলির উদ্দেশ্য।